কোন কাজ ভালো ভাবে করা, মনযোগ দিয়ে করা, ধৈর্য্যের সাথে করা নির্ভর করে আপনার মনযোগ, আন্তরিকতার উপর। আপনি যেভাবে করবেন ফল ও সেরকম হবে। ইতিহাস সেরকম স্বাক্ষি হয়ে আছে। পৃথিবীর সভ্যতার সব মনছবি, মনযোগ, আত্মত্যাগ, আত্মবিশ্বাস, আত্মনিমগ্নতার ইতিহাস বহন করে।
আসলে যে কোনোকিছু মুখোমুখি করার যে সাহস, শান্তভাবে বিনয়ের সাথে সম্মানের সাথে ধৈর্য্যের সাথে করলে তার বিকল্প নেই। এমনকি শত্রুকেও যিনি সম্মানের সাথে মোকাবেলা করতে পারেন শত্রুও তার কিছুই করতে পারে না।
আশাবাদী হোন
সালাউদ্দীন ক্রুসেডের সময় কী করেছিলেন? যখন কিং রিচার্ড অসুস্থ হয়ে পড়লেন অন্য যে কোনো সেনাপতি হলে এই সেনাপতি অসুস্থ হওয়ার সুযোগটা তিনি ব্যবহার করতেন। যেরকম ওয়াটার লু-র যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয়ের কারণ ছিল তার অসুস্থতা। প্রচণ্ড পেটের সমস্যা, ইনটার্নাল সমস্যা, তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না এবং রণক্ষেত্রে যেতে এবং ফিল্ডে কমান্ড পোস্টে যেতেও তার অনেক সময় লেগেছে এবং উনি যখন কমান্ড পোস্টে গেলেন বাই দ্যাট টাইম এভরিথিং ইজ ডিসাইডেড।
কিন্তু সালাউদ্দীন কী করলেন? সালাউদ্দীন হেকিম পাঠিয়ে দিলেন অথবা এমন কথাও আছে যে তিনি নিজেই তার চিকিৎসার জন্যে চলে গেলেন। চিকিৎসা হলো, সুস্থ হলেন। যুদ্ধ আর হলো না। রিচার্ড আর যুদ্ধ করলেন না।
একজন প্রকৃত বুদ্ধিমান মানুষ যে কোনো সিচুয়েশন যে কোনো পরিবেশে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা ,সবচেয়ে বেশি আশাবাদী এবং সবচেয়ে বেশি স্রষ্টার ফয়সালার ওপরে নির্ভরশীল। কিন্তু তিনি করেন তার সাধ্যমত সবটুকুই, সবচেয়ে ভালোভাবে।
সেই কাজটা যতটা ভালোভাবে, যতটুকু ভালোভাবে করা সম্ভব একজন মানুষের পক্ষে ততটুকু ভালোভাবে তিনি করবেন। এবং এটাই হচ্ছে বিশেষত্ব যে, সে একজন মানুষকে তার সামর্থ্যের সবটুকু কাজে লাগাতে যে প্রক্রিয়া সে প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেলে দেয়।
তো এই যে প্রত্যাশা এই যে ইমেজ এই ইমেজটাই হচ্ছে সাকসেসের জন্যে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যে, আপনি পারেন। কাকে স্যালুট করা হয়? যে পারে তাকে স্যালুট করা হয়। যে উদীয়মান সূর্য তাকে স্যালুট করা হয়। অস্তমিত সূর্যকে কেউ স্যালুট করে না।
তো আমরা আমাদের সর্বোত্তমটা করার চেষ্টা করব। অর্থাৎ যা আমরা করব যা আমরা করি থ্রো ইউর হার্ট ঐ কাজের মধ্যে, ঐ কাজের মধ্যে হৃদয়টাকে নিক্ষেপ করে দেবো। কাজ কথা বলবে। বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থাপনা যেগুলো মানুষ দেখতে যায় সেগুলো তৈরি হয়েছিল হৃদয়টাকে ঢেলে দিয়ে। ঐসব স্থানে যিনি যান যত অস্বস্তি নিয়ে যান না কেন যত বিরক্তি নিয়ে যান না কেন যাওয়ার পরে শান্ত। কারণ ওখানে গেলে হৃদয়ের ছোঁয়া পান। যারা এটাকে করেছে তারা যে এটা হৃদয় দিয়ে করেছে এই ছোঁয়া পান।
তাজমহলের আর্কিটেক্টও হৃদয় ঢেলেই তাজমহল গড়েছিলেন
ধরুন তাজমহল এটা একটা অপচয়। এর চেয়ে বড় অপচয় কিছু হতে পারে না। কিন্তু আপনি যখন তাজমহলে যাবেন, আপনার মনে হবে যে, আপনি একটা আলাদা জায়গায় চলে গেছেন।
আবার আপনি যখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখতে যাবেন আপনার মনে হবে যে আপনি একটা জায়গা দেখছেন। এটা আলাদা জায়গা বলে মনে হবে না। কেন? কারণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে দম্ভ আছে। যখন এটা করা হয়েছিল তখন তাজমহলকে অতিক্রম করার জন্যে করা হয়েছিল রানি ভিক্টোরিয়ার স্মরণে। এটা হৃদয়কে আকর্ষণ করে না। হ্যাঁ বড় সুন্দর জিনিস ঠিক আছে!
কিন্তু তাজমহল যে শিল্পী বানিয়েছিলেন উনি জানতেন যে এটা বানানোর পরে আমি আর বাঁচব না। এবং এটা বানানোর পরে তিনি বাঁচেনও নি। যে আর্কিটেক্ট তিনি তার সমস্ত হৃদয় দিয়ে স্থাপনাটা গড়েছেন। যার ফলে ওখানে গেলে আপনি হারিয়ে যাবেন। পূর্ণিমার রাতে যান আপনি হারিয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি পূর্ণিমার রাতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তো কাছেই, কলকাতায় যান আপনি হারাবেন না, আপনি দেখবেন।
দেখা আর দেখার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এই দুটোর মধ্যে আকাশ এবং পাতালের তফাৎ রয়েছে।
তো একজন বুদ্ধিমান যখন কাজ করবে, একজন জ্ঞানী যখন কারো সাথে কথা বলবে সেই মানুষটা হারিয়ে যাবে তার কথার মধ্যে। কেন? সত্যিকার জ্ঞানী তার মঙ্গলের জন্যে তার কল্যাণের জন্য অন্তর থেকে কথা বলছে হৃদয় দিয়ে কথা বলছে হৃদয় ঢেলে দিয়ে কথা বলছে।
আসলে সূত্র কিন্তু সবসময় এক। কনফুসিয়াস যেটা বলেছেন, আমাদের অলি-বুজুর্গরাও বলেছেন যে, অন্তর ঢেলে দাও।
এখন অলিম্পিকের গোল্ড বিজয়ীরা বলছে যে থ্রো ইউর হার্ট! কথা কিন্তু এক। এখন কোন কাজে এটা নিক্ষেপ করবেন এটা হচ্ছে ইম্পর্টেন্ট।
অতএব কথা বলবেন বেস্ট কথা। কাউকে সাহায্য করবেন রাস্তা পার হতে, সে যেন জীবনে মনে রাখে যে, না একজন লোক আমাকে রাস্তা পার করে দিয়েছিল। খুব সহজ সাধারণ জিনিস কিন্তু। নাম না জানলেও যখন তার মনে হবে সে আপনার জন্যে দোয়া করবে।
অর্থাৎ যে কাজটাই করেন ইট শুড বি মেমোরিবল ওয়ান। কাজ টা কখন ভালো হবে? যখন আপনি অন্তর ঢেলে দিয়ে করবেন।
এই মনটাকেই যদি আমরা ঢেলে দেই প্রতিটি কাজে যখন পড়বেন পড়েন যখন লিখবেন লেখেন যখন কথা বলবেন বলেন। কিন্তু অন্তরটাকে ঢেলে দিয়ে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সেটা যে কোনো জায়গায় হোক। পেশাগত হোক সাংগঠনিক হোক পারিবারিক হোক ব্যক্তিগত হোক।
ধরুন হোটেলের রান্না আর মায়ের রান্না তফাৎটা কোথায়? মা যখন রান্না করে সন্তানের জন্যে কিছু না থাকলেও সে ঐটা দিয়ে বেস্ট ওয়েতে করে। হার্টটা দিয়ে করে।
তো আপনি হার্টটা দিয়ে করবেন। যার সাথে কথা বলবেন, কী বলেন আপনার কথা শুনবে না? আরে আপনার কথা শোনার জন্যে সে আপনার বাসায় এসে বসে থাকবে। পরামর্শ নেয়ার জন্যে বাসায় এসে বসে থাকবে যখন আসলে পারপাস অব লাইফটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হবে । আমার জীবনে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যটা কী, কেন বেঁচে থাকব, কী জন্যে আমি আমার জীবনটাকে ব্যয় করব, জীবনটাকে দেবো।
অতএব সবসময় লক্ষ্য থাকবে যে, আমি আমার লক্ষ্যের বিপরীত কোনো কাজের সাথে জড়িয়ে আছি কিনা, আমি যে পারপাস অব লাইফ, যে কারণে জীবনটাকে উৎসর্গ করতে চাচ্ছি সেই লক্ষ্যের বিপরীত কোনোকিছুর সাথে আমি জড়িয়ে পড়ছি কিনা! কিন্তু অসতর্ক হলে সবসময় বিপদের আশঙ্কা থাকে। অতএব আকলটাকে ব্যবহার করবেন, ব্রেনটাকে ব্যবহার করবেন।