পুনরায় উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি হলেন জামালপুরের বকশিগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি সহিদুর রহমান লিপন। তাঁকে উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদে নিযুক্ত করে কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা তাঁতী লীগ। গতকাল সোমবার জামালপুর জেলা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রুকু এবং সদস্য সচিব আরমান হোসেন সাগরের যৌথ স্বাক্ষরে আগামী ৩ বছরের জন্য সহিদুর রহমান লিপনকে বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি নিযুক্ত করে দলীয় প্যাডে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করা হয়।
এর আগে চলতি বছরের ১৭ জুন সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গনমাধ্যমে সহিদুর রহমান লিপনের নাম আসায় তাঁকে উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে জেলা তাঁতী লীগ। সহিদুর রহমান লিপন উপজেলার মালিরচর তকিরপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল করিমের ছেলে। জামালপুরে নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের অনশনজামালপুরে নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের অনশন দলে অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী থাকা সত্ত্বেও একজন সাংবাদিক হত্যা মামলার আসামিকে আবারও উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদে নিযুক্ত করায় জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা।
জেলার সুধি সমাজের মাঝে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্নের। এ ছাড়াও জেলার সাংবাদিকদের মাঝেও তীব্র ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া এবং এজাহারভুক্ত আসামিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি পদে নিযুক্ত করায় আমরা বিস্মিত। মূলত হত্যাকান্ডের দায় থেকে মুক্ত করতেই সন্ত্রাসী লিপনকে তাঁতী লীগের লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি করা হয়েছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে তাঁতী লীগ থেকে অভিযুক্ত লিপনকে বহিষ্কার করা হোক।' সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, ‘আমার বাবার হত্যা মামলার আসামিরা একে একে জামিনে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে।
এতে দিন দিন তারা আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। এতে আমরা ভীতির মধ্যে আছি। আর তারা এসে কার সঙ্গে রাজনীতি করছে এটি দেখলেই বোঝা যায় যে তারা কার কথায় চলে আর আমার বাবার হত্যার পেছনে কারা ছিল।' জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘একটি হত্যা মামলার আসামিকে আবারও উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি করা হয়েছে। দলে আরও অনেক ত্যাগী নেতা আছে। যাদেরকে এই পদের দায়িত্ব দেওয়া যেত। এই বিষয়টি দুঃখজনক।' এ বিষয়ে মোবাইলফোনে কথা হয় নাদিম হত্যা মামলার আসামি ও বকশিগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি সহিদুর রহমান লিপনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি আগেও সভাপতি ছিলাম। এখনও সভাপতি আছি। আমি যদি কোনো কারণে কারাগারে যাই, তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমার পরবর্তী যে আছে তিনি দল পরিচালনা করবেন।' তবে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হলেও তিনি কীভাবে সভাপতি হলেন এবং কবে তার অব্যাহতি তুলে নেওয়া হলো-এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্যস্ততার কথা বলে কলটি কেটে দেন তিনি। এসব বিষয়ে জানতে জেলা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রুকুর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে সম্প্রতি জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় সহিদুর রহমান লিপনকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকতেই পারে। এখন তিনি জামিনে আছেন। সে কারণেই তাঁকে বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার নিহত হন বাংলা নিউজের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর পর ১৬ জুন দুই দফা জানাযার পর বকশিগঞ্জের গুমেরচর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে। সাংবাদিক নাদিম নিহতের ঘটনায় ১৭ জুন বকশিগঞ্জ থানায় মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম। সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন প্রধান আসামি বাবুসহ ১৭ জন। কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন দুজন। উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন এজাহারভুক্ত ৭ আসামি এবং এখনো পলাতক রয়েছেন বাবুর ছেলে রিফাতসহ ৫ আসামি। বকশিগঞ্জ থানা-পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পর এখন মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি।indifent/t