শ্রাবণের শেষভাগে এসে নামল টানা বৃষ্টি। গত চার দিনের শ্রাবণধারায় টইটম্বুর হয়ে উঠছে মাঠ-ঘাট-নদী-নালা-খাল-বিল। তবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-লোকালয়। চট্টগ্রামের সড়কমালায় কোমরসমান পানিতে ঢেউ খেলছে। পার্বত্য জেলাগুলোতে গত তিন দিন ধরে দেখা দিয়েছে পাহাড়ধসের ভয়াবহতা।
বৃষ্টি
গতকালও কক্সবাজারের উখিয়াতে পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং মডেল অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হতে পারে। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে। গতকাল বান্দরবানে দেশের সর্বোচ্চ ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যত ভারী বর্ষণ হবে পার্বত্য এলাকায় ততই ভূমিধস, পাহাড়ধস বাড়বে। কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে। এছাড়া ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো মুষলধারে, কখনো থেমে থেমে। মোটামুটি পুরো দেশ এখন ‘ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনের’ আবহ বিরাজ করছে। ‘বর্ষণ মুখরিত শ্রাবণ। তপ্ত গরমের পর স্বস্তি নিয়ে এসেছে শ্রাবণের ধারা। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠায় আকাশ ঢেকে যাচ্ছে সঘন সজল মেঘমালায়। দেশের কোথাও কোথাও দুই-তিন দিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রাবণের শেষ সপ্তাহের এই বৃষ্টি ঝরতে পারে গোটা আগস্ট মাস জুড়ে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আগস্ট মাস জুড়ে অব্যাহত থাকবে এই বৃষ্টিপাত। তবে ভারী বর্ষণ ক্ষান্ত দিতে পারে দুদিন পরেই।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ১০ আগস্ট পর্যন্ত দেশের আবহাওয়া এমনই থাকতে পারে। তবে কোথাও কোথাও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সারা দিন সারা দেশে বৃষ্টি থাকবে। ঢাকায়ও বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হবে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের ১৮টি অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে। বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে দেশের চার বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। সেই সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আগামী দুই দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুরন্ত গতিতে ছুটছেন এই দুই মোটরসাইকেল আরোহী। হয়তো গন্তব্যে কিংবা কর্মস্থলে পৌঁছাবার তাড়া। ছবি: ইয়াসিন কবির জয়
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, আজ সারা দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হবে। তবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সাগরে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর কিছুটা বায়ু প্রবণ বা উত্তাল থাকতে পারে। প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে। দেশের উপকূলভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগে অতি ভারী বর্ষণসহ রাজশাহী খুলনা বরিশাল ঢাকা সিলেট ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে এসব অঞ্চলের ও কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে। আগামীকাল বুধবার প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত মূলত দিনের প্রথমার্ধে বেশি হতে পারে। এই দিনে দেশের মধ্যাঞ্চল উত্তরাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইত্তেফাক/এমএএম