আফ্রিকান নেশনস কাপে কোনো ভাবেই ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারছিল না মিসর। গ্রুপ পর্বে নিজেদের তিন ম্যাচে ড্র করেও ভাগ্যগুণে শেষ ষোলোতে জায়গা পেয়েছিল টুর্নামেন্টে রেকর্ড সাত বারের চ্যাম্পিয়নরা। একদিকে জয়খরা, অন্যদিকে দলের সবচেয়ে বড় তারকা মোহাম্মদ সালাহসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের চোট আফ্রিকার দেশটির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নক আউট পর্বে জয়ের দেখা পেতে সৌভাগ্য ফেরানোর আশায় গত বৃহস্পতিবার একটি গরু কোরবানি দিয়েছিল মিসর। কিন্তু তাতেও ভাগ্য দেবীর সুদৃষ্টি পায়নি তাঁরা। গতকাল রোববার রাতে কঙ্গোর বিপক্ষে টাইব্রেকারের নাটকীয়তায় ৮-৭ ব্যবধানে হেরে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় সালাহদের।
অবশ্য এ ম্যাচে চোটের কারণে মাঠে নামতে পারেননি সালাহ। এমনকি দলের এক নম্বর গোলরক্ষককেও পায়নি মিসর। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ম্যাচ জুড়েই ভুগেছেন রুই ভিতোরিয়ার শিষ্যরা। টাইব্রেকারে কঙ্গোর একটি শটও ঠেকাতে পারেননি মিসরের এ ম্যাচের গোলরক্ষক মোহাম্মদ আবোউ গাবাল।
আইভরি কোস্টের এস্তাতে দে সান পেদ্রো স্টেডিয়ামে এদিন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ মিসরের হাতে থাকলেও আক্রমণভাগে খেই হারিয়ে ফেলেন সালাহবিহীন রুই ভিতোরিয়ার শিষ্যরা। প্রতি আক্রমণে সুযোগ কাজে লাগান কঙ্গোর ২৬ বছর বয়সী উইংগার মেশক এলিয়া। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে কঙ্গোকে এগিয়ে দেন তিনি।
ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয়নি মিসর। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে স্পটকিক থেকে গোল করে ম্যাচের সমতা ফেরান মোস্তফা মোহামেদ। দ্বিতীয়ার্ধে স্ট্রাইকারদের একের পর এক ব্যর্থতায় আর কোনো গোলের দেখা পায়নি মিসর। ১-১ গোলে শেষ হওয়া ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের ৭ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মিসরের বদলি নামা লেফট ব্যাক মোহামেদ হামদি শারাফ। দশজনের মিসরকে পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি কঙ্গো। আর কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে। সেখানেও চলে নাটক।
নাটকের প্রথম পর্ব মঞ্চস্থ হয় টাইব্রেকারের দ্বিতীয় শটে। মিসরের হয়ে শট নিতে আসেন ম্যাচে পেনাল্টি থেকে ঠান্ডা মাথায় গোল করা মোস্তফা। টাইব্রেকারে গড়বড় পাকিয়ে ফেলেন তিনি। পোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়ে শট নেন মিসরের স্ট্রাইকার। মজার বিষয়, মোস্তফার মতো দ্বিতীয় শট থেকে একইভাবে গোল করতে ব্যর্থ হয় কঙ্গো।
৪-৪ গোলে শেষ হয় প্রথম পাঁচ শটের টাইব্রেকার নাটক। ম্যাচের ফল না আসায় চলতে থাকে পেনাল্টি পর্ব। পরের তিন শটেই গোলের দেখা পায় দুই দল। আট শট শেষে পেনাল্টি স্কোর ৭-৭।
নবম পেনাল্টিতে পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন মিসরের গোলরক্ষক গাবাল। কিন্তু কঙ্গোর লিওনেল এমপ্যাসির শটটি ঠেকাতে পারেননি তিনি। এতেই নিশ্চিত হয়ে যায়, শেষ ষোলো থেকেই বাড়ি ফিরতে হবে মিসরকে।
এর আগে সৌভাগ্যের ফেরানোর আশায় গত বৃহস্পতিবার একটি গরু কোরবানি সান পেদ্রোর বিমান ধরেছিল মিসর। পরে সে মাংস রাজধানী কায়রোর আশেপাশের অভাবী মানুষদের মাঝে সে মাংস ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্য ফেরাতে গরু কোরবানি দেওয়ার পন্থা অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০০৮ সালে নেশনস কাপে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে গরু কোরবানি দিয়েছিল মিসর। সেবার টুর্নামেন্টের শিরোপাও জিতেছিল তাঁরা।