দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ বিরতির জন্য হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গাজা ছেড়ে যাওয়া শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল। এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত দুইজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।
হামাসকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করার ইসরায়েলি লক্ষ্য বাস্তবায়ন না হওয়ার মধ্যেই আসা এ প্রস্তাবটি আগে প্রকাশ করা হয়নি। ইসরায়েল নিজেই বলছে, সংঘাতের প্রায় চার মাসেও হামাসের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতাকেই তাঁরা আটক করতে পারেনি। গোষ্ঠিটির ৭০ শতাংশ যোদ্ধা এখনও অক্ষত।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে হামাসের শীর্ষ নেতারা গাজা থেকে নিরাপদে বেড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে অনেকেই গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন। এতে যুদ্ধ পরবর্তী গাজায় হামাসের নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু বিদেশে হামাসের গুরুত্বপূর্ন নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করার সুযোগ ইসরায়েলের হাতে থাকবে।
ধারণা করা হয়, হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতারা ফিলিস্তিন এলাকার বাহিরে কাতারের দোহা এবং লেবাননের বৈরুতে বসবাস করেন। এই মাসেই বৈরুতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় হামাসের একজন শীর্ষ নেতা নিহত হন।
হামাস নেতাদের গাজা ছাড়ার শর্ত দিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবটি হামাস এখনও গ্রহণ করেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া অন্তত দুটি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় এই প্রস্তাবটি তোলা হয়। এরমধ্যে একটি গত মাসে অনুষ্ঠিত হয় ওয়াসোতে। বৈঠকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধান মোসাদ পরিচালক ডেভিড বারনেয়া প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই মাসে দোহায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও একই প্রস্তাব দিয়েছেন।
একই সঙ্গে সংঘাতে বিরতি ও গাজায় থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে কূটনৈতিক তৎপরতাও চলছে। হোয়াইট হাউজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ব্রেট ম্যাকগ্রুক এ বিষয়ে আরও আলোচনা করতে এই সপ্তাহে মিশর ও কাতার ভ্রমন করছেন।
আমেরিকা এবং আন্তর্জাতিক কর্মকর্তাদের যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত তারা বলছেন, ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে এ ধরনের আলোচনা আশা জাগাচ্ছে। অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি।
নেতানিয়াহুর উপর চাপ বাড়ছে
গাজায় হামলা নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর উপর চাপ বাড়ছে। হামাসের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ বিজয়ের যে লক্ষ্য তিনি নির্ধারণ করেছেন তা তার নিজের ভাষাতেই অনেক দুরে। একই সঙ্গে গাজায় বন্দি থাকা শতাধিক জিম্মিকে মুক্ত করতে সরকারের ব্যর্থতায় ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
কারনেইজ ইনডুমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো অ্যারন ডেভিড মিলার জানান, ইসরায়েল তার সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ফলে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের প্রতি প্রচন্ড চাপ তৈরি হয়েছে। এতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে ইসরায়েল এখন প্রস্তাব করছে যাতে হামাস নেতারা গাজা ছেড়ে চলে যায়।
অন্যদিকে, গাজায় লাগাতার বোমাবর্ষণে ইসরায়েল তার আন্তর্জাতিক সমর্থনও হারিয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশী ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
গত প্রায় দুই মাস থেকে বাইডেন প্রশাসন প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে যুদ্ধের ব্যাপকতা কমানোর অনুরোধ জানিয়ে আসছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এই অনুরোধ কাজ হচ্ছ। অবশ্য দক্ষিণ গাজায় এখনও ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত আছে।