শীত জেঁকে বসার সাথে সাথে যশোর, নাটোর ও চুয়াডাঙ্গায় খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরির ধুম পড়েছে। তবে, ভেজাল গুড়ের কারণে বিশুদ্ধ পাটালি বিক্রি করে যথেষ্ট লাভ থাকছে না। নির্বিচারে গাছ কাটায় পর্যাপ্ত রস সংগ্রহ করতেও বেগ পেতে হচ্ছে গাছিদের। তারপরও সুনামের কারণে এসব জেলার পণ্য বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে।
যশোরের তেজরো গ্রামের মিলন হোসেন বংশ পরম্পরায় গত ১৫ বছর ধরে খেজুরের রস সংগ্রহ, গুড় ও পাটালি তৈরি করে জীবিকা চালাচ্ছেন। তিনি জানান, অনেক গাছ কেটে ফেলায় পর্যাপ্ত রস মেলে না এখন।
মিলন হোসেন বলেন, 'আগে গাছ ছিলো অনেক। কিছু গাছ বড় হওয়ায় রস আসেনা। কিছু মারা গেছে, কিছু কেটে ফেলেছে। এখন আমি ৭০টি গাছ কাটি। এই রস বাসায় নিয়ে গিয়ে জ্বালাবো। এরপর গুড়, পাটালি বানাবো।'
মিলনের মতো অনেক গাছি রস সংগ্রহ করে বাড়িতেই তৈরি করছেন গুড়। তবে জ্বালানির দাম বাড়ায় ৪৫০ টাকা কেজিতে গুড় ও ৫০০ টাকা কেজিতে পাটালি বিক্রি করে যথেষ্ট লাভ থাকছে না।
রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করেন এমন একজন গাছি বলেন, 'এখন ঠিলে পোড়াচ্ছি। আরেকটু পর আবার গাছ কাটতে যাবো। শীত পড়লে রসও ভালো হয়। গুড়ও বেশী হয়। পরিশ্রম হিসেবে বাজারে ন্যায্যমূল্য পাইনা। জ্বালানি কিনতে হচ্ছে অনেক বেশি টাকা দিয়ে। কিন্তু যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে জোনের দামও ওঠে না।'
এদিকে, জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গা সদরের সরোজগঞ্জ গুড়ের হাট। জেলার পাশাপাশি কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরের ব্যবসায়ীরাও শত বছরের পুরানো এ হাটে আসছেন গুড় ও পাটালি বিক্রি করতে।
একজন গুড় বিক্রেতা বলেন, 'বহুদিনের পুরাতন হাট। দেশ বিদেশ থেকে হাটে ব্যাপারিরা আসে। ঢাকা, সিলেট পাবনা থেকে আসে। আমরা হাটে ট্রাক সাজিয়ে দেই। এখানকার গুড় ভাল। অনেক চাহিদা।'
নাটোরের গুড় উৎপাদনকারীদের অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল গুড় তৈরির করায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে ভেজাল ঠেকাতে নজরদারির কথা বলছে প্রশাসন।
এক উৎপাদক বলেন, 'টিনের বাক্সে কিছু ভেজাল গুড় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায়। সেই গুড়ের মধ্যে মেডিসিন দিয়ে তারা আকর্ষনীয় রঙের গুড় তৈরি করে। হাটে তাদের আকর্ষনীয় গুড় দাম বেশী পায় আর কৃষকদের গুড়ের রং একটু কালো হয় তাই তাদের গুড় দাম পায় না।'
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁঞা বলেন, 'মাঝে মাঝে দেখা যায় কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী খেজুরের রসের সাথে অবৈধ কেমিক্যাল মিশিয়ে অধিকলাভের আশায় ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। আমরা এসব বিষয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।'
যশোর, নাটোর ও চুয়াডাঙ্গার প্রায় সাড়ে ১২ লাখ খেজুর গাছ থেকে এ মৌসুমে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করছেন গাছিরা।