মিজানুর রহমান, ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার কৃতি সন্তান অধ্যাপক ড. সাঈদুর রহমান। তিনি উপজেলার ২নং রামভদ্রপুর ইউনিয়নের চরনিয়ামত গ্রামের আব্দুল হাকিম ও বাদরুল আরা বেগমের পুত্র।
তিনি যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাস্টারের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শক্তি প্রযুক্তি বিভাগ এবং মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোম্যাটরিয়ালস অ্যান্ড এনার্জি টেকনোলজির অধ্যাপক।গত ১৮ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাস্টারের জরিপে ২০২০ সালের সেরা চার গবেষকের তালিকায় তার নাম প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় সেরা চার জনের মধ্যে তিনি ৩য়। আর ১ম হলেন, রয়্যাল সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিক গ্রাহাম, ২য় ক্রপ সায়েন্সেসের অধ্যাপক স্টিভ লং এবং ৪র্থ ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেস চুয়া।সাঈদুর রহমান ছোটবেলায় নিজ উপজেলার চরনিয়ামত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাস করেন।এরপর ১৯৮৮ সনে ভাইটকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯০ সনে ময়মনসিংহ কেবি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৯২-৯৭ সেশনে বুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, ২০০১ সনে মালয়েশিয়ার মালয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সনে তিনি কৃতিত্বের সাথে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণায় পুরস্কার পান সাঈদুর রহমান।তার কাজের মধ্যে ল্যাঙ্কাস্টারের এনার্জি রিসার্চ গ্রুপের নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য ন্যানোম্যাটরিয়ালের গবেষণা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।ল্যাঙ্কাস্টারে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি প্রায় ৫০০টি জার্নালে নিবন্ধ, কার্যপত্রিকা, বইয়ের অধ্যায় এবং একটি ল্যাঙ্কাস্টারের অধিভুক্তি সঙ্গে পর্যালোচনা প্রকাশ করেছেন।বিশ্বের ৫ শতাধিক জার্নালে তার গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে। জানা গেছে, তার গবেষণাপত্র বিশ্বের অন্যান্য গবেষকদের কাছে সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। তার গবেষণা কাজগুলোতে ৩৬ হাজারেরও বেশি উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে।ওয়েব অব সাইন্স ন্যানোফ্লুয়েড গবেষণায় তিনি ১ম স্থানে রয়েছেন বলেও জানা গেছে। ড. সাঈদুর রহমান ল্যাঙ্কাস্টার এবং সানওয়ের মধ্যে সহযোগী সংযোগগুলো প্রচার করেন এবং এমএক্সেনে ন্যানোফ্লুয়েড ও ঘন সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকার তার গবেষণাকে গ্রহণ করে প্রয়োগ করেন।এ গবেষণা কাজে নিউটন তহবিল সহযোগিতা করে।
ল্যাঙ্কাস্টারের রাসায়নিক প্রকৌশল এবং শক্তি গবেষণা দলগুলোর সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। মেন্ডেলি ডাটাবেস দ্বারা প্রকাশিত বৈশ্বিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনি যান্ত্রিক প্রকৌশল ক্ষেত্রে ৪৯ এবং শক্তি ক্ষেত্রে ৫০তম স্থান অর্জন করেছেন।ডিপার্টমেন্ট অব বিজনেস পলিসি, ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যান্ড অ্যাকাউনটেন্সি, ইউনিভার্সিটি অব মালায়ার পিএইচডি গবেষক মো. সোহেল রানা বলেন, অধ্যাপক সাঈদুর রহমান ক্ল্যারিভেট কর্তৃক প্রকাশিত উচ্চতর উদ্ধৃত বার্ষিক গবেষক তালিকায় প্রথম।প্রকাশিত তালিকায় অধ্যাপক ড. সাঈদুর রহমান গত দশকে একাধিকবার উচ্চ উদ্ধৃত গবেষকের স্বীকৃতি পেয়েছেন, যা কাজের মেধা ও প্রজ্ঞা এবং ভবিষ্যত পৃথিবীর প্রয়োজনে দিক-নির্দেশনা প্রকাশ করে। তিনি আরো বলেন, তার এই অনন্য অর্জনে গবেষণা ক্ষেত্রে নতুন গবেষক তথা সকল বাংলাদেশী গবেষকদের মধ্যে নতুন নতুন গবেষণালব্ধ জ্ঞান সৃষ্টিতে প্রেরণা যোগাবে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক সাঈদুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের উদ্দেশ্য বলেন, আমার গবেষণার অভিজ্ঞতাটি ভাগ করে নেয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত আছি। আমি আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে বিশ্বে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবো।কৃতি এ বিজ্ঞানী আরো বলেন, এনার্জি এখন বিশ্বের অন্যতম অনুষঙ্গ। উন্নয়নের বা ভোগের অন্যতম চালিকা শক্তি।
অল্প বিনিয়োগে অধিক এনার্জি উৎপাদন, টেকসই উন্নয়নে এ গবেষণা এবং এর প্রয়োগের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতা হতে পারে আমার।বাংলাদেশী গবেষকদের জন্য মাঝে মাঝে অনলাইন গবেষণা সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে বলেও তিনি জানান।
এ জাতীয় আরো খবর..